বাংলাদেশ থেকে Erasmus Mundus Scholarship পাওয়ার সহজ উপায়

Table of Contents

বাংলাদেশ থেকে Erasmus Mundus Scholarship পাওয়ার সহজ উপায়

Erasmus Mundus Joint Masters – জানো, বোঝো, শুরু করো..

বাংলাদেশের প্রতিভাবান তরুণ-তরুণীরা আজ শুধু দেশের নয়, গোটা বিশ্বের ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর। কিন্তু অনেকেই জানো না, ইউরোপের সবচেয়ে বড় ফুল-ফান্ডেড মাস্টার্স স্কলারশিপ Erasmus Mundus Joint Masters Scholarship-এর দরজা তোমার জন্যও পুরোপুরি খোলা। না, এখানে শুধু CGPA-এর পেছনে দৌড় নয়—প্রয়োজন তোমার আত্মবিশ্বাস, স্পষ্ট লক্ষ্য, সঠিক প্রস্তুতি এবং সময়মতো আবেদন।
এই প্রবন্ধটি সেই স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পথ দেখাতে লেখা। এটা তিন পর্বে প্রকাশিত হবে, আর আজ তুমি পড়ছো প্রথম পর্ব—যেখানে আমরা জানবো Erasmus Mundus কী, কেন এটা তোমার জন্য উপযুক্ত,কিভাবে শুরু করতে হবে, আর Step-by-Step আবেদনে কি কি লাগবে, এবং এই Erasmus Mundus Scholarship এর outstanding journey।
Erasmus Mundus Joint Master (EMJM):
Erasmus Mundus Joint Master (EMJM) হলো ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম, যা তোমাকে ২ বছরের মধ্যে ২ থেকে ৪টি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পড়ার সুযোগ দিবে। তুমি শুধু একটি মাস্টার্স ডিগ্রি নয়, বরং একাধিক দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জীবন যাপনের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারো।

EMJM স্কলারশিপে যা পাবে:

– প্রতি মাসে ১,৪০০ ইউরো স্কলারশিপ, ২ বছর ধরে (বাংলাদেশি টাকায় মাসে প্রায় ১.৮ লাখ টাকা)
– পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ
– ইউরোপজুড়ে কিংবা ইউরোপের বাহিরে পড়ালেখা ও ভ্রমণের সুযোগ
– ইন্টারন্যাশনাল ডিগ্রি (জJoint or Multiple) ও চাকরির সুযোগ

আমি কি Apply করতে পারব? আমি কি স্কলারশিপ  পাবো?

— অবশ্যই, অবশ্যই পারবে! একেবারে বাস্তব ব্যাপার হলো—বাংলাদেশ থেকে গত অনেকগুলো বছরেই প্রতিবছর শতাধিক শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে এই স্কলারশিপ পেয়েছে এবং পাচ্ছে।

EMJM-এ আবেদন করার জন্য দরকার:

– একটি প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ব্যাচেলর ডিগ্রি (৩-৪ বছর; ১৬০ European Credits)
– ভালো মোটিভেশন লেটার
– ইংরেজি ভাষার দক্ষতা (IELTS বা সমতুল্য)
– আত্মবিশ্বাস এবং একটি পরিপূর্ণ প্রোফাইল

CGPA কম হলে কি হবে?

— না, এতে খুব বেশি কিছু যায় আসে না যদি তুমি দেখাতে পারো যে:
-তুমি কি শিখেছো
-কীভাবে সেটি কাজে লাগাবে
– এবং কেন তুমি Erasmus Mundus-এর জন্য উপযুক্ত
Remember: তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম খুব বিখ্যাত না হলেও, তোমার স্বপ্নটা বড় হলে তাতেই চলবে। স্বপ্নটা বড় করো, আর সেটা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত লেগে থাকো; চ্যালেঞ্জ নেওয়া থেকে পালিয়ো না!

কীভাবে শুরু করবো? — Erasmus Journey-এর প্রথম ধাপ

Step 1: ক্যাটালগ ঘাঁটো, নিজের প্রোগ্রাম খুঁজে বের করো..
প্রথমেই যেতে হবে EMJM ক্যাটালগে:
এখানে দুই-শতাধিক মাস্টার্স প্রোগ্রাম আছে, যার প্রতিটিই বিভিন্ন নূন্যতম ২টি দেশের ২টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪টি দেশের ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়েন্ট Partnership/অংশীদারিত্বে তৈরি। প্রতিটি প্রোগ্রামের আছে আলাদা কারিকুলাম, আলাদা সুযোগ, আলাদা আবেদন সময়সীমা।
Step 2: নিজের পছন্দের বিষয় খুঁজে বের করো…
শুধু নাম দেখে নয়, প্রোগ্রামের ভিতরের বিষয়বস্তু দেখো:
– কারিকুলাম
– কনসোর্টিয়াম ইউনিভার্সিটি
– পড়ার বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের নাম
– গবেষণার সুযোগ
– ভবিষ্যতের চাকরির সম্ভাবনা
Step 3: সময়ের মূল্য দাও…
প্রতিটি প্রোগ্রাম বছরে একবার আবেদনের সুযোগ। তুমি যদি একটি প্রোগ্রাম পছন্দ করো কিন্তু সময়মতো আবেদন না করো, পরের বছর সেটি নাও থাকতে পারে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বার্তা
তুমি যদি ঢাকার কোনো নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে না-ও পড়ো, অথবা বাংলাদেশের কোনো প্রান্তিক জেলা এলাকার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে পড়াশোনা কর, Erasmus Mundus সবার জন্যই। এই স্কলারশিপ তোমার মেধা, মনোভাব আর পরিশ্রমের প্রমাণ চায়—তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় নয়।
তোমার পূর্বসূরিরা পেরেছে, তুমিও পারবে। দরকার কেবল:
– সঠিক তথ্য
– বাস্তবসম্মত প্রস্তুতি
– এবং নিজের উপর ১০০% বিশ্বাস

Step-by-Step আবেদন প্রক্রিয়া: ৫টি ধাপে তোমার সাফল্য

১. প্রোগ্রাম নির্বাচন (Explore the Catalogue):

তোমার আগ্রহ, পড়াশোনার বিষয় এবং ভবিষ্যতের লক্ষ্য অনুযায়ী Erasmus Mundus ক্যাটালগ থেকে প্রোগ্রাম বেছে নাও।
প্রতিটি প্রোগ্রামের ওয়েবসাইটে গিয়ে:
– কারিকুলাম
– ইউনিভার্সিটির নাম
– ভিসা ও ভাষা চাহিদা
– সময়সীমা
…এগুলো ভালোভাবে যাচাই করো।

২. তথ্য সংগ্রহ (Gather Information):

নির্বাচিত প্রোগ্রামের ওয়েবসাইট থেকে –
– Eligibility
– Required Documents
– Language Requirement
– FAQs
– Scholarship Details
…এ সবকিছু খুব ভালোভাবে পড়ো।
মনে রেখো:
তোমার Eligibility শুধু CGPA নয়, তোমার প্রোফাইল, অভিজ্ঞতা, মোটিভেশন—সব কিছু মিলিয়ে বিবেচনা করা হয়।
তোমার শক্তিশালী প্রোফাইল গড়তে যা লাগবে
১. Academic Documents:
– ডিগ্রি সার্টিফিকেট (ব্যাচেলর/মাস্টার্স)
– ট্রান্সক্রিপ্ট (শেষ সেমিস্টার পর্যন্ত)
– Appeared সার্টিফিকেট (যদি ফাইনাল ইয়ারে পড়ো)
২. Language Proficiency:
– IELTS (সাধারণত ৬.৫ বা ৭.০)
– TOEFL / Duolingo কিছু প্রোগ্রামে চলতে পারে
কিছু প্রোগ্রাম ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনার সার্টিফিকেট নেয় (বিস্তারিত আরেক পর্বে আলোচনা হবে)
টিপস:
IELTS-এর প্রস্তুতি আগেভাগে শুরু করো। সময়মতো রেজাল্ট না পেলে অনেক প্রোগ্রাম আবেদন নেয় না।

৩. Curriculum Vitae (CV):

– ২/৩ পৃষ্ঠার মধ্যে রাখো
– Europass format ব্যবহার করো
– প্রাসঙ্গিক বিষয় আগে রাখো: Education → Experience → Skills → Courses → Publications → Activities
টিপস:
– যদি মাস্টার্সে আবেদন করো, তাহলে Education আগে দাও
– কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে সংক্ষেপে bullet points এ দাও
– Extra-curricular, কোর্স বা সনদ থাকলে, সেগুলো প্রাসঙ্গিক হলে যোগ করো

৪. Motivation Letter: তোমার গল্প, তোমার শক্তি Motivation Letter লিখার মূল লক্ষ্য:

– তুমি কেন এই প্রোগ্রাম করতে চাও
– তোমার আগ্রহ কোথা থেকে এসেছে
– এই প্রোগ্রাম তোমার ভবিষ্যতের সাথে কীভাবে যুক্ত
– কেন তোমাকে স্কলারশিপ দেয়া উচিত
টিপস:
– CV এর কথা এখানে কপি-পেস্ট করোনা
– ছোট গল্প আকারে বলো, অনুভব করাও; এমন ভাবে লিখো যেন শেষ হইয়াও শেষ হলো না
– নিজের ভাষায়, সহজে লিখো
-কাউকে দিয়ে রিভিউ করাও
– প্ল্যাজারিজম ও AI-জেনারেটেড টেক্সট এড়িয়ে চলো

৫. Recommendation Letters

– সাধারণত ২টি রেফারেন্স চাওয়া হয়
– তোমার শিক্ষক বা সুপারভাইজর দিতে পারেন
– কেউ যদি তোমাকে ভালোভাবে না চিনে, তার কাছ থেকে রেফারেন্স না নেয়াই ভালো
আমাদের দেশে সাধারণ সমস্যা:
– শিক্ষক ব্যস্ত, নিজেই লিখে দিতে হতে পারে (অনুমতি ও অর্ডার সাপেক্ষে )
– নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাস্তব উদাহরণ দিয়ে লিখো
– রেফারিকে সময় দাও, প্রয়োজনে রিমাইন্ডার দাও
পরবর্তী পর্বে কী থাকবে?
এই সিরিজের দ্বিতীয় পর্বে আমরা জানবো—
– ডকুমেন্টস কিভাবে তৈরি ও জমা দিবে?
– তোমার CGPA কম হলে কি করবে?
– প্রুফ অব ন্যাশনালিটি ও রেসিডেন্স সার্টিফিকেট
– স্কলারশিপ কাভারেজ ও ফাইন্যান্সিয়াল পরিকল্পনা
-অতিরিক্ত ডকুমেন্টস ও সফল অ্যাপ্লিকেশন ট্র্যাক
Stay tuned!
নিজেকে প্রস্তুত করো, কারণ ইউরোপ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। Erasmus Mundus Scholarship দিয়ে তোমার স্বপ্নপূরণের যাত্রা আজ থেকেই শুরু হোক।
তুমি যদি এখনো ভাবছো “আমি কি পারবো Erasmus Mundus স্কলারশিপ পেতে?”—তাহলে উত্তর একটাই: হ্যাঁ, পারবে!
পূর্বে আমরা জেনেছি Erasmus Mundus Joint Masters কী, কিভাবে প্রোগ্রাম খুঁজে বের করতে হয়, কীভাবে আবেদন করতে হবে এবং কোন কোন ডকুমেন্টস লাগবে।

এখন আমরা জানবো—কীভাবে নিজের প্রোফাইল গড়ে তুললে তুমি সত্যিই সবার থেকে এগিয়ে যাবে

এবং
Erasmus Mundus স্কলারশিপ কী কী কভার করে
• অর্থনৈতিক প্রস্তুতির বাস্তবতা
• প্রুফ অব ন্যাশনালিটি ও রেসিডেন্স সার্টিফিকেট
• গুরুত্বপূর্ণ অতিরিক্ত ডকুমেন্টস
এই পর্ব শেষ করলেই তুমি পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে একটি সম্ভাবনাময় আবেদন সাবমিট করতে।

ডকুমেন্টস কিভাবে তৈরি ও জমা দিবে?

• সব ডকুমেন্টস PDF ফরম্যাটে স্ক্যান করো
• প্রোগ্রাম অনুযায়ী ফাইল নাম ও ফরম্যাট ঠিক রাখো
• কিছু প্রোগ্রামে রেফারেন্স ইমেইলে যাবে, কিছুতে আপলোড করতে হয়—তাই নিয়ম বুঝে চলো
• যেকোনো বাড়তি সার্টিফিকেট দিলে সেটা প্রাসঙ্গিক কি না দেখো

তোমার CGPA কম? ভয় পেয়ো না!

Erasmus Mundus প্রোগ্রামগুলো CGPA-ভিত্তিক নয়, বরং holistic অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল মূল্যায়ন করে।
যদি তোমার CGPA কমও হয়:
• কাজের অভিজ্ঞতা
• রিলেভ্যান্ট কোর্সে দক্ষতা (অনলাইন কোর্সও হতে পারে)
• গবেষণা দক্ষতা
• একাডেমিক কমিউনিটি ও একাডেমি রিলেভ্যান্ট ভলান্টারি কাজ
…এই সব দিয়ে প্রমাণ করো তুমি স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্য।

নিজেকে জিজ্ঞেস করো — আমি কি প্রস্তুত?

• আমি কি আমার আগ্রহ অনুযায়ী প্রোগ্রাম খুঁজে পেয়েছি?
• আমি কি ইংরেজি ভাষা দক্ষতা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি?
• আমার CV ও Motivation Letter প্রস্তুত?
• আমি কি সময়মতো রেফারেন্স নিশ্চিত করেছি?
*** তুমি যদি “হ্যাঁ” বলতে পারো, তাহলেই তুমি প্রস্তুত।

Erasmus Mundus Joint Masters স্কলারশিপে তুমি কী কী পাবে?

১. মাসিক স্টাইপেন্ড – ১,৪০০ ইউরো (প্রায় ১.৮ লাখ টাকা)

• তোমার খাবার, থাকা, ভ্রমণ ও ডেইলি খরচ কভার করার জন্য
• দুই বছর পুরোটা সময়ই নিয়মিত প্রদান করা হয় (প্রোগ্রাম যদি ১ বছরে হয়, তাহলে ১ বছর কভার করবে; ১.৫ বছরের হলে, ১.৫ বছর কভার করবে)

২. পূর্ণ টিউশন ফি সহ একাডেমি রিলেটেড সকল ফি মওকুফ

• অনেক কোর্সে যেখানে প্রায় ১৮,০০০ – ২৬,০০০ ইউরো টিউশন ফি প্রতি বছরে, সেটি একেবারে ফ্রি
• ইউনিভার্সিটিগুলোর রেজিস্ট্রেশন ফি, সেমিনার, সামার স্কুল, উইন্টার স্কুল, ল্যাবরেটরি ফি সহ সকল ফি মওকুফ
• ইনস্যুরেন্স অন্তর্ভুক্ত

৩. মেডিকেল  ভাতা

• ইউরোপের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী মেডিকেল, দুর্ঘটনা, এবং জরুরি চিকিৎসা কভার করে
• এমনকি আপনি সেল্ফ-ফান্ডেড হলেও অনেক ইউনিভার্সিটি ইনস্যুরেন্স দেয়
তাহলে নিজ খরচে কিছু লাগবে না?
– সত্যিটা জেনে নাও! হ্যাঁ, শুরুতেই কিছু খরচ তোমাকে করতে হবে, কারণ স্কলারশিপ হাতে পাওয়ার আগে কিছু ব্যয় থাকে:
১. ভিসা ও ফ্লাইট খরচ:
• প্রায় ১,০০০–১,৫০০ ইউরো দরকার হতে পারে
• কারণ প্রথম স্কলারশিপ কিস্তি সাধারণত ইউরোপ পৌঁছে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার পর প্রথম মাসের ১ সপ্তাহে অথবা শেষ সপ্তাহে পাওয়া যায়
২. প্রাথমিক থাকা ও খাবার খরচ (১ম মাস)
• এক মাসের জন্য আগাম প্রস্তুতি রাখতে হবে
তোমার পরিকল্পনা কেমন হওয়া উচিত?
• Erasmus Mundus স্কলারশিপ পেলে ২–২.৫ লাখ টাকা আগাম খরচের জন্য প্রস্তুতি রাখা জরুরি।
• এই টাকাটা স্কলারশিপ পেলে তুমি শোধ করে ফেলতে পারবে।

জাতীয়তা ও রেসিডেন্স প্রমাণ: Partner Country নাকি Programme Country?

Erasmus Mundus-এর স্কলারশিপ কোটা নির্ধারিত হয় আবেদনকারীর রেসিডেন্স স্ট্যাটাস অনুযায়ী।
বাংলাদেশিরা সাধারণত Partner Country অ্যাপ্লিক্যান্ট
– তবে গত ৫ বছরে যদি তুমি ইউরোপে একটানা ১২ মাসের বেশি থেকো, তাহলে Programme Country হিসাবে গণ্য হবে।
যে ডকুমেন্টস দিতে হবে:
১. প্রুফ অব ন্যাশনালিটি
• পাসপোর্টের স্ক্যান কপি – বাধ্যতামূলক
• জাতীয় পরিচয়পত্র সাধারণত গ্রহণযোগ্য নয়
২. রেসিডেন্স সার্টিফিকেট
• যেখানে থাকো সেই ঠিকানার অফিসিয়াল প্রমাণ
• হতে পারে:
 – স্থানীয় ইউনিয়ন/সিটি কর্পোরেশনের সনদ
   – চাকরিদাতা বা ইউনিভার্সিটির অফিসিয়াল চিঠি
(বিস্তারিত আরেকটি আর্টিকেলে লিখব; Stay tuned! )
অতিরিক্ত ডকুমেন্টস
১. অনলাইন কোর্স ও সার্টিফিকেট
• Coursera, edX, Udemy–র প্রাসঙ্গিক কোর্স করলে সেগুলো CV-তে যুক্ত করো
• এগুলো তোমার আগ্রহ ও সক্ষমতা প্রকাশ করে
২. এক্সট্রা-কারিকুলার ও ভলান্টারি কাজ
• ক্লাব, অলিম্পিয়াড, কমিউনিটি সেবা – যা যেই Erasmus program-এ আবেদন করেছেন, সেই প্রোগ্রামের mission-vision এর সঙ্গে মিলে যায়
• এসব কাজ প্রোগ্রামের প্রতি তোমার কমিটমেন্টকে তুলে ধরে
৩. GRE, GMAT – প্রয়োজন নেই, তবে দিলে বাড়তি পয়েন্ট
• কিছু প্রোগ্রামে ঐচ্ছিক হিসেবে নেওয়া হয়

আবেদনের শেষ ধাপ: মনোবল আর ধৈর্য

তোমার সব ডকুমেন্ট প্রস্তুত?
তাহলে তুমি আবেদনের জন্য তৈরি!
আবেদন করার আগে চেক করো:
• ফাইল ফরম্যাট ঠিক আছে?
• সব ডকুমেন্ট PDF?
• ফাইলের নাম ঠিকমতো দেওয়া?
• রেফারেন্স ঠিকঠাক আপলোড/ইমেইল হয়েছে?
সবশেষে:
সময় মতো আবেদন জমা দাও, কারণ Erasmus Mundus সময়মতো আবেদনকারীদের গুরুত্ব দেয়।
পরবর্তী ও চূড়ান্ত পর্বে কী থাকছে?
৩য় পর্বে থাকছে:
• ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি
• ফলাফল পাওয়ার পর করণীয়
• প্রতারণা থেকে সাবধানতা
• Alumni নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সাপোর্ট নেওয়ার কৌশল
Erasmus Mundus স্কলারশিপ শুধু একটি স্কলারশিপ নয়—এটি একটি জীবন বদলে দেওয়া আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা। আর তুমি তারই অংশ হতে পারো—তোমার সাহস, প্রস্তুতি, এবং প্রবল ইচ্ছার মাধ্যমে।
তুমি যদি পূর্বের বিষয় গুলো  মমনোযোগ  দিয়ে পড়ে থাকো, তাহলে এখন তোমার Erasmus Mundus Joint Master আবেদন প্রায় প্রস্তুত। এই চূড়ান্ত পর্বে তুমি জানতে পারবে, স্কলারশিপের শেষ ধাপগুলো কীভাবে অতিক্রম করতে হবে—ইন্টারভিউয়ের সময় কী বলবে, রেজাল্ট পাওয়ার পর কীভাবে প্রস্তুতি নেবে, এবং একজন Erasmus Mundus Joint Master শিক্ষার্থী হিসেবে তোমার ভবিষ্যৎ জীবন কেমন হতে পারে।
ইন্টারভিউ — নিজেকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উপস্থাপন করো
সব প্রোগ্রামে ইন্টারভিউ হয় না, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে Shortlisted হওয়ার পর অনলাইনে Zoom/Skype এর মাধ্যমে ইন্টারভিউ নেওয়া হয়।
ইন্টারভিউতে যা জিজ্ঞাসা হতে পারে:
 • তোমার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড
 • কেন এই প্রোগ্রামটি বেছে নিয়েছো?
 • ভবিষ্যতের লক্ষ্য কী?
 • তুমি একাধিক দেশের স্টাডি কারিকুলাম এবং কালচার কীভাবে মানিয়ে নিতে পারবে বলে মনে করো?
 • প্রোগ্রামের কোন ইউনিভার্সিটি তোমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন?
 • স্কলারশিপ না পেলে তুমি কি সেল্ফ-ফান্ডেড হতে পারবে?
প্রস্তুতির জন্য কিছু টিপস:
 • Motivation Letter ও CV থেকেই মূলত প্রশ্ন হতে পারে
 • প্রোগ্রাম ওয়েবসাইট আবার পড়ো
 • ইংরেজিতে সাবলীল উত্তর দিতে অনুশীলন করো
 • পরিপাটি হয়ে অনলাইন ইন্টারভিউ দাও (পোশাক, ব্যাকগ্রাউন্ড, আলো ঠিক রাখো)
রেজাল্ট – এক্সাইটমেন্ট, অপেক্ষা ও সম্ভাবনার মুহূর্ত
রেজাল্ট সাধারণত মার্চ থেকে জুনের মধ্যে আসে। অনেক সময় ইমেইলের মাধ্যমে জানানো হয়, অনেক সময় ওয়েবসাইটে নাম প্রকাশ করা হয়।

যদি নির্বাচিত হও:

 • অভিনন্দন!
 • তোমাকে অফার লেটার পাঠানো হবে
 • তারপরে ভিসা, ফ্লাইট, বাসস্থান ইত্যাদির প্রস্তুতি শুরু করতে হবে
 • ইউনিভার্সিটি তোমাকে পরবর্তী ধাপগুলো জানিয়ে দেবে

যদি স্কলারশিপ না পাও:

 • হতাশ হবে না
 • পরের বছর একই প্রোগ্রামে কিংবা নতুন প্রোগ্রামে আবার আবেদন করতে পারো
 • আগে যেসব প্রোগ্রামে shortlist হয়েছিলে, সেগুলোতে কোথায় কোথায় ইম্প্রুভ করা যায়, খুঁজে বের করে পরের বছর আরেক ধাপ এগিয়ে থাকার চেস্টা কর
(নোট: ২ বছরে ৩০ লাখের অধিক খরচ করার সামর্থ থাকলে সেল্ফ ফান্ডিং নিয়ে পড়ালেখা করার চিন্তা করতে পারো!)
সতর্কতা – প্রতারণা থেকে নিজেকে রক্ষা করো
Erasmus Mundus Joint Masters প্রোগ্রাম আবেদন সম্পূর্ণ ফ্রি—কেউ কিংবা কোন প্রোগ্রাম যদি তোমার কাছে কোনো টাকা চায় তাহলে সেটা প্রতারণা!

কোনো ব্যক্তি বা এজেন্সি যদি বলে:

 • “আমি Erasmus-এর ভিতরে লোক চিনি, টাকা দিলে স্কলারশিপ পাবে”
 • “তোমার হয়ে আমি আবেদন করবো, শুধু ফি দাও”
 • “তোমার Motivation Letter বা রেফারেন্স বানিয়ে দেব যা তোমাকে Erasmus মাস্ট পাইয়ে দিবে, টাকা দাও, ইত্যাদি”
…তাহলে সেইসব কথা বিশ্বাস করোনা।
তুমি নিজেই যথেষ্ট। তুমি নিজেই পারো।
Alumni নেটওয়ার্ক: সকল কাজের হেল্পিং হ্যান্ড
Erasmus Mundus-এর সবচেয়ে বড় শক্তি গ্লোবাল Alumni Network—বিশ্বের প্রতিটি কোণায় রয়েছে হাজার হাজার সফল Alumni, যারা তোমার মতো একদিন স্বপ্ন দেখেছিল।

কীভাবে Alumni Network তোমার উপকারে আসতে পারে:

 • প্রোফাইল চেক বা ডকুমেন্ট রিভিউতে সহায়তা
 • প্রোগ্রাম-ভিত্তিক অভিজ্ঞতা শেয়ার
 • ইউরোপে গিয়ে হোস্টিং, হেল্প বা গাইডলাইন
 • চাকরি বা PhD’র জন্য কনেকশন

বাংলাদেশের Erasmus Mundus Alumni-দের কিছু প্ল্যাটফর্ম:

 • Erasmus Mundus Bangladesh
 • ইউনিভার্সিটি কেন্দ্রিক কিংবা ক্লাব কেন্দ্রিক Promotional programs, Regional Meetups, Alumni Talks – সেগুলোতে অংশগ্রহণ করো
শেষ কথা: Erasmus Mundus – এ তুমি শুধু একটি স্কলারশিপে আবেদন করছো না—তুমি এক নতুন পৃথিবীতে পা রাখছো, যেখানে তোমার স্বপ্ন, দক্ষতা ও পরিচিতি এক নতুন মাত্রা পাবে।
ইউরোপের ক্লাসরুমে বসে যখন তুমি বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একসঙ্গে পড়বে, তখন বুঝতে পারবে তুমি শুধু “বাংলাদেশের একজন” নয়—তুমি একজন গ্লোবাল সিটিজেন।
বিশ্বাস রাখো নিজের উপর। সঠিক পরিকল্পনা ও সাহসিকতা নিয়ে আবেদন করো। Erasmus Mundus শুধু অধিক CGPA-ধারীদের জন্যই নয়—এটা তোমার জন্যও!
লেখক:
Dr-Ashiqur Rahman
President, Erasmus Mundus Association (EMA)
Alumnus, EMJM ARCHMAT | MSCA COFUND Tech4Culture | MSCA ITN ED-ARCHMAT | Research Fellow – Spanish National Research Council | Regional Manager – Asia, Centralised Support for Erasmus+ National Focal Points

Leave a Comment