Table of Contents
Toggleমেক্সট স্কলারশিপের খুটিনাটি
১. জাপানে আপনি কেনো আসবেন!
উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় জাপানের নাম শীর্ষের দিকেই থাকবে।
সূর্যোদয়ের দেশটিতে বর্তমানে সারা পৃথিবীর প্রায় ১৬০ টি অধিক দেশের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছে। এর মধ্যে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও কম না। রিসেন্টলি একটা সমীক্ষা দেখলাম,সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৬ লাখ শিক্ষার্থী বিদেশে পড়াশোনা করছে,তার মধ্যে প্রায় ১০% শিক্ষার্থী জাপানে পড়াশোনা করেন।
জাপানে কেনো একজন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য আসেন! এ বিষয় আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই আসে,দেশটির উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার কথা,সুন্দর পরিবেশের কথা,উন্নত প্রযুক্তির কথা।
তাই কেউ যদি বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে চান,তাহলে জাপানকে অবশ্যই পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন।
২. বিদেশে পড়াশোনা
আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা মনে করে যে বিদেশে পড়তে আসা মানে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে আসা। তাই অনেকে স্কলারশিপের পেছনে ছুটতে সময় ব্যয় করে কিংবা অনেকই স্কলারশিপ না পেয়ে উচ্চশিক্ষার আশাই ছেড়ে দেয়। আমি এই বিষয় মানতে পারি না।কারন আমি মনে করি, আপনি যদি লেগে থাকেন,তাহলে সফলতা অবশ্যই আসবে।
৩.সরকারি স্কলারশিপ( MEXT Scholarship ) কি!
জাপানে সরকারি স্কলারশিপ বলতে দেশটির বিজ্ঞান ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া মেক্সট বা মনবুশো স্কলারশিপকে বুঝায়। আমাদের দেশের সবাই actually মেক্সট স্কলারশিপ হিসাবে জানেন। সাধারণত কয়েকটি ক্যাটাগরিতে এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়।
যারা ১১ বছর পড়াশোনা অর্থাৎ স্কুল পাশ করে কলেজে ভর্তি হতে চান, তাদের জন্য জাপান সরকার চালু করেছে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা । চার বছর মেয়াদি আর্কিটেকচার, মেকানিক্যাল, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাবে।
১৯৯৬ সালের পরবর্তী সময়ে জন্মগ্রহণকারীরা বাংলাদেশে অবস্থিত জাপান দূতাবাসের মাধ্যমে এই স্কলারশিপের আবেদন করতে পারবেন। আবেদনকারী যদি জাপানি ভাষায় দক্ষ না হয়, তবে তাকে স্কলারশিপ পাওয়ার পর জাপানে জাপানি ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
সাধারণত ফেব্রুয়ারির দিকে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় দূতাবাস। তাছাড়া নিয়মিত আপডেট পেতে জাপান দূতাবাসের ওয়েব সাইট দেখেতে পারেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে আবেদনপত্র গ্রহণ করা হলেও বাছাই পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা দূতাবাস নিয়ন্ত্রণ করেন।
৪. স্নাতক বা আন্ডারগ্রাজুয়েট
আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থী মেডিকেল, বুয়েট বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে পড়াশোনার আশা ছেড়ে দেন। তাই যারা এইচএসসি পাশের পর জাপানে স্নাতক করতে চান, তাদের জন্যও সুযোগ দিয়েছে জাপান সরকার। দুই ক্যাটাগরিতে, এই স্কলারশিপ জাপান সরকার দিয়ে থাকে, কলা-বাণিজ্য ও বিশুদ্ধ বিজ্ঞান।
মানবিক বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- অর্থনীতি, আইন, রাজনীতি, ইতিহাস, ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট, সামাজিক বিজ্ঞান ও জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি।
আর বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য- ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল, ইইই, সিভিল, আর্কিটেকচার, নেভাল, পরিবেশ বিজ্ঞান, গণিত, পদার্থ,রসায়ন, ফার্মেসি, ডেন্টাল, কৃষি, খাদ্য বিজ্ঞান, ফরেস্টি, টেক্সটাইল, বায়োটেকনোলজি, মেডিসিন, স্বাস্থ্য বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়।
১২ বছরের শিক্ষাজীবন অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিক পাশকৃতদের জাপান দূতাবাসের মাধ্যমেই আবেদন করতে হবে। কলা ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীদেরকে গণিত, ইংরেজি ও জাপানি ভাষার উপর লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যদের নির্বাচিত করা হবে।
আর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য গণিত, ইংরেজি, জাপানিজ ছাড়াও রসায়ন, পদার্থ ও জীববিজ্ঞানের মধ্য থেকে দুইটি বিষয় সর্বমোট পাঁচটি বিষয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
জাপানে আসার পর এক বছর বিশেষ জাপানিজ ভাষা শিখতে হবে। টোকিও ও ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য এইসব শিক্ষার্থীদের এই এক বছর সময়কালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি যোগ্য করে তোলা হবে।
স্কলারশিপ পাঁচ বছরের। প্রতি মাসে শিক্ষার্থীদের ১ লাখ ১৭ হাজার ইয়েন (১০০ ইয়েন=৭৮ টাকা)
৫. মাস্টার্স ও পিএইচডি
আমার আলোচনার বিষয়টা এই জায়গায়। মাস্টার্স বা পিএইচডির ক্ষেত্রে স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্র কিছুটা ভিন্ন। সাধারণত ১৬ বছর অধ্যয়ন করেছে যারা, তারাই মাস্টার্সের জন্য উপযুক্ত হন। মানে আপনার পড়াশোনা বয়স ১৬ বছর হতে হবে( আপনার বয়স না)।
জাপানে সাধারণত বছরে দুইটি সেশনে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়- এপ্রিল ও অক্টোবর সেশন। স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনার জন্য বর্ণিত বিষয়গুলো স্নাতকোত্তর বা মাস্টার্স পর্যায়েও পড়ানো হয়।
তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পর্বের পড়াশোনা ইংরেজি মাধ্যমে করানো হয়। আবার কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স লির্ডিং পিএইচডি বা মাস্টার্সের সাথে পিএইডি কোর্স যুক্ত করা হয়।
অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেমন- টোকিও, ওসাকা, কিয়েতো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগেই অন্যদেশের মাস্টার্স পছন্দ করে না। তাই শিক্ষার্থীদেরকে দুই বছরের মাস্টার্স ও তিন বছরের পিএইচডি করার সুযোগ দেয়। আমার কাছে এটা অনেক বড় সুযোগ মনে হয়।কারন আপনি মাস্টার্স করলেন সাথে আপনি পিএইচডিও করতে পারলেন।আপনার আর নতুন করে সুপারভাইজার খুজতে হলো না।
কারণ, বাংলাদেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স পড়ানো হয় মাত্র এক বছরের জন্য( অনেক ডিপার্টমেন্ট আছে,যারা এখন ২ বছর করছে মাস্টার্স কোর্স) । অথচ দেশের বাইরে তা দুই বছর। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভর্তির শর্তগুলো কিছুটা ভিন্ন।
পিএইচডি পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীদের ১৮ বছরের শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করতে হয়। কলা, বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল নিয়ে পিএইচডি বা ডক্টরেট করতে আগ্রহীদের কোর্স তিন বছর মেয়াদি হয়। আর যারা চিকিৎসা শাস্ত্র বা দেশে এমবিবিএস সম্পূর্ণ করছেন, তারা সরাসরি পিএইচডি করতে পারেন মেডিসিন ফ্যাকাল্টির অধীনে।
বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের যেকোনো বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণকারীরা মেডিসিন ফ্যাকাল্টির অধীনে ডক্টরেট করতে পারেন। তবে এই ফ্যাকাল্টির পিএইচডি সাধারণত চার বছর মেয়াদি হয়ে থাকে।
জাপানে সরাসরি চিকিৎসা শাস্ত্রে বিদেশিরা এমবিবিএস করতে পারেন না। কারণ এই কোর্সের ভাষা হলো জাপানিজ। আপনি যদি দেশে এমবিবিএস সম্পূর্ণ করে এই দেশে চিকিৎসা দিতে চান, সেটাও আপনি পারবেন না। জাপানে চিকিৎসকরা কেবল জাপানিই হবেন। আপনি এখানে এমডি, পিএইচডিও অন্যন্য পেশাগত ট্রেনিং নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে জাপান সরকারের বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
৬. স্কলারশিপ কত উপায়ে পাবেন!
সাধারণত পিএইচডি বা মাস্টার্সের জন্য সরকারি স্কলারশিপ পাওয়া যায় দু’ভাবে যেমন:
1. বাংলাদেশে জাপান দূতাবাসের মাধ্যমে
2.জাপানে কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারিশের মাধ্যমে ।
আরো এক উপায়ে সরকারি স্কলারশিপ পাওয়া যায়,যেমন Internal MEXT Scholarship
আমি স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়গুলো অল্প পরিসরে আলোচনা করলাম—
৭. বাংলাদেশ জাপান দূতাবাসের মাধ্যমে কিভাবে স্কলারশিপ পাবেন!
সাধারণত এপ্রিল সেশনে জাপান দূতাবাসের মাধ্যমে এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশ জাপান দূতাবাসের মাধ্যমে স্কলারশিপ পাওয়া অনেক ডিফিকাল্ট। সরকারি চাকুরীজীবিদের জন্য এক্ষেত্রে সুযোগ বেশি থাকে। সবকিছু জাপান দূতাবাস নিয়ন্ত্রণ করে। আর হ্যাঁ! আপনি দূতাবাসের মাধ্যমে আসলেও ১৪৫০০০ ইয়েনই পাবেন।
৮.জাপানে কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারিশের মাধ্যমে কিভাবে স্কলারশিপ পাবেন!
ধরুন, আপনি জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান। তাহলে প্রথমে আপনাকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আপনার কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের অধ্যাপককে খুঁজে বের হবে। অধ্যাপককে ব্যক্তিগত ইমেইল পাঠিয়ে তাকে রাজি করাতে হবে যে আপনি মেক্সট বা মনবুশো স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে চান। সেই ক্ষেত্রে ওই অধ্যাপকের সম্মতি থাকতে হবে। অধ্যাপক সম্মতি দিলে আপনাকে ওই অধ্যাপকই কিংবা আপনাকেই মনবুশোর আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। এই আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর আপনার অধ্যাপক আপনার যে সুপারভাইজার বা তত্ত্ববধায়ক হতে চান, তা আবেদনপত্রে উল্লেখ করতে হয়।
আবেদনপত্র সাবমিট করার পর আপনাকে ওই অধ্যাপক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনার সাথে যোগাযোগ করবে। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপারিশে বৃত্তি পাওয়ার আবেদন নভেম্বরের শুরুতে শুরু হয়। আবেদনপত্র জমার পর স্বীয় বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অধ্যাপক আপনার স্কাইপে মৌখিক পরীক্ষা নেবেন। সেখানে আপনার পরিচয়, আপনি কোন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, সে বিষয়ের কিছু মৌলিক প্রশ্ন, আপনি কীভাবে এই অধ্যাপকের খোঁজ পেলেন ইত্যাদি জিজ্ঞসা করা হয়।
৯. Internal MEXT Scholarship কিভাবে পাবেন!
আমি নিজেও জানতাম না যে,এইভাবে মেক্সট স্কলারশিপ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে প্রাইভেট স্কলারশিপ অথবা প্রফেসর ফান্ডিং এর মাধ্যমে জাপান আসতে হবে। তারপর ল্যাবে কাজ শুরু করে দিবেন। আপনি যদি প্রফেসর কে কাজের মাধ্যমে খুশি করতে পারেন,তাহলে প্রফেসর রিকমেন্ডেশন এর মাধ্যমে এপ্লাই করবেন। যদি আপনার ভাগ্য ভালো থাকে,তাহলে আপনি অবশ্যই পাবেন। আর হ্যাঁ! এই স্কলারশিপ শুধুমাত্র জাপানিজ ছাত্র- ছাত্রীদের জন্য।
(বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্যও সুযোগ রয়েছে,তবে বেশি না)। আর আপনি যদি মেক্সট স্কলারশিপ পেয়ে যান,তাহলে আপনি Same সুযোগসুবিধা পাবেন।প্রতিমাসে আপনাকে ১৪৫০০০ ইয়েন দেওয়া হবে।
আরো কিছু সরকারি স্কলারশিপ আছে যেগুলো জাপান আসার পর এপ্লাই করতে পারবেন যেমন:
১০. JSPS( Japan Society for Promotion Science)
সাধারণত এই স্কলারশিপটা শুধু মাত্র Post- Doctoral শিক্ষার্থীদের দিয়ে থাকে। তবে কিছু পিএইচডি শিক্ষার্থীদেরও দেওয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি জাপানে আসার পর প্রফেসর রিকমেন্ডেশন এর মাধ্যমে এপ্লাই করবেন। আপনি যদি JSPS পেয়ে যান তাহলে প্রতি মাসে প্রায় ১৮০০০০ ইয়েন পাবেন।
১১. JASSO ( Japan Students Service organisations)
এই স্কলারশিপের Procedure মেক্সট স্কলারশিপের মতো। তবে এক্ষেত্রে আপনি টাকা একটু কম পাবেন।আমার জানা মতে ১২০০০০ ইয়েন প্রতিমাসে।
সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরাসরি ছাত্র ভর্তি করায় না। মনবুশো স্কলারশিপ পাওয়ার পর আপনাকে জাপানে এসে মাস্টার্স বা পিএইচডি ভর্তি হওয়ার জন্য ছয় মাস থেকে এক বছরের প্রস্তুতি নিতে হবে। ভর্তি পরীক্ষার এই প্রস্তুতিকালে জাপানিজ ভাষাও শিখতে হবে। আর এই সময়টায় আপনাকে রিসার্স স্টুডেন্ট হিসেবে গণ্য করা হয়।
আর যদি আপনাকে সরাসরি ভর্তি করায়, তাহলে আপনাকে মেক্সট স্কলারশিপের জন্য প্রথম পর্বের মৌখিক পরীক্ষার পর সেটা দ্বিতীয় পর্যায়ে আরেকবার স্কাইপ ভাইভা নেওয়া হয়। অনেক সময় ইমেইলে কিছু প্রশ্ন পাঠিয়ে দেওয়া হয়, সেটাই ভর্তি পরীক্ষা হিসেবে বিবেচ্য হয়।
আর যদি জাপানে আসার ছয় মাস কিংবা এক বছর পর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হয়, তাহলে সেই ক্ষেত্রে আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। আপনাকে জাপানিজ শিক্ষার্থীর মতো এই পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।
১২. প্রাইভেট স্কলারশিপ
জাপানে বিভিন্ন ধরনের প্রাইভেট স্কলারশিপ রয়েছে। হামাসু,রটারি, প্যানাসনিকসহ বিভিন্ন কোম্পানির নামে উচ্চশিক্ষার স্কলারশিপ চালু রয়েছে। তবে এইসব স্কলারশিপ মাস্টার্স বা পিএইচডির জন্য। আপনি যদি অধ্যাপককে ম্যানেজ করতে পারেন, তাহলে অধ্যাপক তার চলমান বিভিন্ন প্রজক্টের ফান্ডে আপনাকে স্কলারশিপের সমমূল্যে ভাতা দেবেন।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব স্কলারশিপ আপনার পড়াশোনার জন্য কাজে দেয়। তাই প্রাইভেট ফান্ডিং পড়াশোনার জন্য অধ্যাপক ম্যানেজ করা ছাড়া কোনো বিকল্প থাকে না।
তবে প্রাইভেট ফান্ডিং এ আসলে টিউশন ফি দেওয়া লাগতে পারে।(১০% অথবা৫০% দেওয়া লাগতে পারে)
আর মেক্সট স্কলারদের জন্য কোনো টিউশন ফি দিতে হয় না।সবকিছু জাপান সরকার ম্যানেজ করে।
১৩. অধ্যাপক (সুপারভাইজার) অনুসন্ধান
ইতোমধ্যে আশা করি অধ্যাপক ম্যানেজ করার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন। জাপানি দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদনটা কিছুটা কষ্টকরও প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়। এর চেয়ে যদি আপনি জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধ্যাপক ম্যানেজ করে আবেদন করতে পারেন, সেক্ষেত্রে স্কলারশিপ পাওয়া সুবিধা হয়।
বিদেশে একজন অধ্যাপকের ক্ষমতাই সব। তিনি যা করেন, সেটি অগ্রধিকারযোগ্য। তাই স্কলারশিপ পেতে হলে সুপারভাইজার বা অধ্যাপকের অনুসন্ধান ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। একজন সুপারভাইজার যখন পেয়ে যাবেন, তখন মনে রাখবেন- আপনার সুযোগ ৯৫ শতাংশ হয়ে গেছে।
অধ্যাপকদের ইমেইল আইডি হলো অধ্যাপকদের সাথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। তাই এই ইমেইল আইডিটি আপনি বিভিন্নভাবে পেয়ে যাবেন। আমার দেওয়া ২-৩ টি কৌশল অনুসন্ধান করলে আপনাদের অন্য কোনো নিয়ম অনুসরণ করতে হবে বলে আমি মনে করি না। অধ্যাপকদের ইমেইল আইডি সাধারণত জার্নাল পেপারগুলোতে থাকে।
১. সেই অনুযায়ী ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন’ হচ্ছে তথ্যভাণ্ডার। এই ওয়েব সাইটে পাবমেডে গিয়ে পেয়ে যাবেন অধ্যাপকদের ঠিকানা ও ইমেইল আইডি।
২. প্রথমে এই http://www.ncbi.nlm.nih.gov/ pubmed/.. লিংকে গিয়ে উপরের দিকে সার্চ অপশন পাবেন। সেখানে গিয়ে নিজের কাঙ্ক্ষিত শব্দটি দিয়ে নিমিষে পেয়ে যাবেন কয়েকশ জার্নাল। ধরুন, আপনার সাবজেক্ট জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং। এই ক্ষেত্রে আপনি জেনেটিক্সের কোনো বিষয় দিয়ে দিলে অনেকগুলো জার্নাল পেয়ে যাবেন। অথবা আপনি ইচ্ছে করলে আপনার কাঙ্ক্ষিত দেশ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লিখেও সার্চ দিতে পারেন।
৩. এবার একেকটি জার্নাল পেপার খুলুন। মূল শিরোনামের পরে ‘অথর ইনফরমেশন’ নামে একটি অপশন আছে। সেখানে গিয়ে দেখবেন যে অথরের ইমেইল আইডি দেওয়া আছে।
৪. এই পেপারগুলোতে শুধুমাত্র অ্যাবস্টাক্ট থাকে। অনেক সময় ইমেইল আইডি নাও থাকতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ডানদিকে ফুলটেক্সট অথবা ফ্রি টেক্সট নামে পিডিএফ অপশন আছে। ওই মূল পেপারে অবশ্যই ইমেইল আইডি পাওয়া যায়।
৫.ধরুন আপনি কোথায় যাবেন,কোন ইউনিভার্সিটতে যাবেন এখনো ঠিক করেন নাই।তাহলে কিভাবে আপনি প্রফেসরের ইমেইল ম্যানেজ করবেন! আমি কিছু সহজ নিয়ম বলে দিচ্ছি —
প্রথমে আপনি গুগলে গিয়ে জাপানের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি লিখে Search করেন। দেখবেন জাপানের সব ইউনিভার্সিটির নাম চলে আসছে according to topper to lower.
তারপর আপনি একটা ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে ঢুকেন।আপনি ইউনিভার্সিটির সব ইনফরমেশন দেখতে থাকেন। প্রতিটি ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে ফ্যাকাল্টি,ফ্যাকাল্টির আন্ডারে কতোগুলো ডিপার্টমেন্ট আছে সব দেওয়া থাকবে।
ধরুন আপনি বায়োকেমিস্ট্রির ছাত্র, তাহলে আপনি প্রথমে বায়োলজিক্যাল ফ্যাকাল্টিতে ঢুকুন। তারপর ঐ ফ্যাকাল্টির আন্ডারে যদি বায়োকেমিস্ট্রি সাবজেক্ট থাকে,তাহলে আপনি প্রফেসরের ইমেইলটা ডিপার্টমেন্ট থেকে পেয়ে যাবেন। যদি আপনি ইমেইল না পান,তাহলে আপনি প্রফেসরের নাম copy করেন।এখন গুগলে গিয়ে Pubmed লিখে Search করেন।Pubmed এর হোম পেজে গিয়ে প্রফেসরের নাম টা Paste করে search করেন,তাহলে আশা করি আপনি প্রফেসরের সব পেপার পেয়ে যাবেন।আর পেপার এর মধ্যে অবশ্যই আপনি ইমেইল আইডি পাবেন( Author information এর মধ্যে ইমেইল আইডি থাকবে)।
এভাবে এই মেইল আইডি সংগ্রহ করে অধ্যাপকদেরকে ইমেইল করা শুরু করুন।
যেহেতু বিদেশি শিক্ষা ব্যবস্থা গবেষণাভিত্তিক, সেহেতু অধ্যাপকদের ল্যাবের ঠিকানা পেতে গেলে আর একটি সহজ অপশন বলে দিতে পারি। আপনি গুগলে গিয়ে সার্চ অপশনে লিখে ফেলুন ল্যাবরেটরির নাম।
ধরুন, আপনি বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের শিক্ষার্থী। এক্ষেত্রে লিখতেই পারেন মলিকুলার ল্যাবরেটরি। মূল কথা, আপনার বিভাগের সাবজেক্টের মূল কয়েকটি শব্দ লিখে সাথে ল্যাবরেটরি লিখুন। দেখবেন সরাসরি ল্যাবের ঠিকানা চলে আসছে। আর ল্যাবের ঠিকানা পেলে সেখানে গিয়ে দেখুন মেম্বার নামে একটি অপশন আছে, যেখানে অধ্যাপকদের সাথে যোগাযোগের জন্য ইমেইল আইডি দেওয়া আছে।
১৪. মটিভেশন লেটার ও বায়োডাটা
ইমেইল আইডি পাওয়ার পর যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তা হলো একটি মটিভেশন লেটার। একজন অধ্যাপককে ম্যানেজ করার জাদুমন্ত্রটি হলো একটি সুন্দর মটিভেশন লেটার। এই পত্রটির ভাষাই বলে দেবে- আপনি কেমন, আপনার মেধা-মনন সবকিছু ফুটে উঠবে। মনে রাখবেন, আপনি অধ্যাপককে দেখনেনি, এমন কি প্রফেসরও আপনাকে দেখেনি। সুতরাং আপনাদের দুই জনের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করার হাতিয়ার এটি। এই দুরূহ কাজটি করার অভিপ্রায় নিজে নিজে নিয়ে ফেলুন।
সেখানে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করবেন। আপনার বর্তমান পড়াশোনার অবস্থা, গবেষণার অবস্থা, ভবিষ্যৎ ইচ্ছা, আপনি কেনো সেই অধ্যাপককে পছন্দ করেন ইত্যাদি। এজন্য আমার পরামর্শ থাকবে, গুগলে গিয়ে ডেমো দেখে নিতে পারেন। আর বায়োডাটা অবশ্যই বিজ্ঞানসম্মত হতে হবে। চাকুরির বায়োডাটা আর স্কলারশিপে বিদেশে পড়াশোনার বায়োডাটা কখনও এক হতে পারে না।
এক্ষেত্রে আপনি আপনার সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত ছাড়াও আপনার কোনো সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতা থাকলে সেই সেমিনারগুলোর টাইটেলও যোগ করতে পারেন। তবে অভিজ্ঞতার অপশনে অবশ্যই আপনি ব্যবহারিক পড়াশোনার অংশবিশেষ তুলে ধরতে পারেন। মোট কথা, বায়োডাটা অবশ্যই গবেষণা করার কিছু নমুনা তুলে ধরা যেতে পারে।
এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, সব অধ্যাপক আপনার ইমেইলের উত্তর দেয় না। অনেকের কাছে আমি নিজে শুনেছি যে কয়েকশ’ মেইল দিলে হয়তো তিন-চারটির উত্তর মেলে। সুতরাং হতাশ হওয়ার কারণ নেই। আপনি ইমেইল করতে থাকুন।
অধ্যাপকরা অনেক সময় কিছু অ্যাসাইনমেন্ট করতে দেয়। অনেক সময় আপনার ইমেইলে পজেটিভ উত্তর দেওয়ার পর আপনাকে অপশন দিতে পারে,তুমি আমার এই আর্টিকেলের সারমর্ম করে পাঠাও, এরপর আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে মৌলিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
১৫. নন-থিসিস এর জন্য কেমন সুযোগ আছে!
অনেকে আছেন যারা থিসিস করেন নাই,কিন্তু বাইরে আসতে চান তাদের জন্য আমার কিছু পরামর্শ রইলো
১. আপনি যদি কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে জব করেন,তাহলে আপনি রোগীর ডাটা কালেকশন করে পেপার করতে পারেন।
২. জাপানের একজন প্রফেসর যদি আপনাকে নিতে চায়,তাহলে আপনার রিসার্চ ব্যাকগ্রাউন্ড জানতে চাইবেন। সেক্ষেত্রে আপনি কোনো ল্যাবে গিয়ে ৩-৪ মাস একটা বিষয়ের উপর কাজ করেন।তাহলে আপনার অভিজ্ঞতা হবে,সাথে আপনি আপনার ৩-৪ মাসের কাজের রেজাল্ট দিয়ে একটা Abstract বানাতে পারবেন।কারন আপনাকে রিসার্চ ব্যাকগ্রাউন্ডের উপর প্রেজেন্টেশন দিতে হবে।
১৬. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
সিজিপিএ ( আপনাকে কম্পিটিশনে টিকে থাকার জন্য সিজিপিএ ভালো হতে হবে।ধরুন একটা ইউনিভার্সিটিতে ১০ জন শিক্ষার্থী নিবেন।এপ্লাই করেছে ২০ জন।তাহলে যার সিজিপিএ ভালো তার পজিশন থাকবে উপরে), IELTS( score 5.5/6.00), TOEFL( score 55), TOEIC ( score 550), পেপার।
১৭. পাসপোর্ট
আপনি যদি মনে-প্রাণে ধরে নেন যে আপনি বিদেশে পড়াশোনা করতে আসবেন, তাহলে অপেক্ষার পাল্লাটি কমিয়ে ফেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি পাসপোর্ট করে ফেলুন। কারণ আপনি যখন কোথাও আবেদন করবেন, অনেক সময় এই জিনিসটি অধ্যাপকরা হরহামেশা চেয়ে বসে। শুধু নাগিরকত্ব প্রমাণের জন্য নয়, আপনার স্মার্টনেসটাও এখানে এসে প্রকাশ পায়।
মো: মনিরুল ইসলাম
পিএইচডি শিক্ষার্থী
হামামাতসু মেডিকেল ইউনিভার্সিটি